সোয়েব সাঈদ, রামু
প্রকাশিত: ২৭/১১/২০২৩ ৫:৫৪ পিএম

একদিকে বিরামহীন ভাবে কাটা হচ্ছে পাহাড়, অন্যদিকে পাহাড়ের মাটি সমতল করে তাতে চলছে স্থাপনা নির্মাণের প্রস্তুতি। মজুদ করা হয়েছে বিপুল নির্মাণ সামগ্রীও। রাতের অন্ধকারেও শ্রমিক দিয়ে কাটা হচ্ছে পাহাড়ের মাটি। কক্সবাজারের রামুতে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত পাহাড় কেটে এভাবে পোল্ট্রি খামার নির্মাণ করছে প্রভাবশালী চক্র।
কক্সবাজারের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা পশ্চিম গনিয়াকাটা টিলাপাড়া এলাকায় পাহাড় নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন, ওই এলাকার আনোয়ার উল্লাহর ছেলে পাহাড়খেকো হিসেবে পরিচিত ওসমান গনি। ওসমান গনির বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণেরও অভিযোগ রয়েছে। কেবল পাহাড় কাটা নয়, ওসমান গনির বিরুদ্ধে প্রতিবেশী লোকজনের বসত বাড়ির পাশে একাধিক পোল্টি খামারের বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ এবং ধানি জমি বিনষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে।
পাহাড় কাটার খবর পেয়ে গত ১৭ অক্টোবর ঘটনাস্থলে অভিযান চালান রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা ও রামু থানার ওসি আবু তাহের দেওয়ান। ওই সময় অভিযানের খবর পেয়ে পাহাড় খেকো ওসমান গনি ও মাটি কাটায় জড়িতরা সটকে পড়েন। পরে ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা ঘটনাস্থল থেকে বেশকিছু নির্মাণ সামগ্রী জব্দ করে কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলমের জিম্মায় দেন এবং তাৎক্ষনিক পাহাড় কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু এ অভিযানের কয়েকদিন পর থেকে আবারও পাহাড় কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে ওসমান গনি।
এনিয়ে গত ২৩ অক্টোবর পাহাড়খেকো ওসমান গনির বিরুদ্ধে পাহাড়া কাটা ও পরিবেশ দূষণের প্রতিকার চেয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন- পরিবেশ দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত পিয়ার মোহাম্মদ নামের এক বাসিন্দা। তিনি ওই এলাকার মৃত আমির আলীর ছেলে।
পেয়ার মোহাম্মদ জানান- অভিযুক্ত ওসমান গনি এক মাস পূর্বে তার বসত বাড়ির ১০০ গজ দূরত্বে পোল্ট্রি খামার নির্মাণের লক্ষ্যে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত বিশাল পাহাড় কাটা শুরু করে। ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক দ্বারা দিনরাত পাহাড় কেটে বর্তমানে পাহাড়ের একাংশ সমতল জমিতে রুপান্তর করে পোল্ট্রি খামার নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে শ্রমিক দিয়ে একদিকে পাহাড় কাটা হচ্ছে এবং অন্যদিকে বিপুল পরিমান নির্মাণ সামগ্রী মজুদ করে পোল্ট্রি খামার নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ মুহুর্তে জরুরীভাবে পদক্ষেপ না নিলে পাহাড়খেকো ওসমান গনির নেতৃত্বে প্রভাবশালী চক্রটি আশপাশের আরও কয়েকটি পাহাড়ও নিধন করে ফেলবে।
পেয়ার মোহাম্মদ আরও জানান- ওসমান গনি তার বসত বাড়ির পাশে ৩/৪ বছর পূর্বে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে একটি বড় গর্ত তৈরী করে। এরপর থেকে ওই গর্তে তার দুটি পোল্ট্রি খামারের সকল প্রকার বিষাক্ত তরল বর্জ্য ফেলে আসছে। বাড়ির একেবারেই সন্নিকটে খামারের বিষাক্ত বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবারের সদস্যরা প্রায় সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে। বর্জ্য ভর্তি ওই গর্ত থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত পোকামাকড় আমার বসত বাড়িতে প্রবেশ করছে। উৎকট দূর্গন্ধে পরিবারের সদস্যরা প্রায় সময় বমিও করে। এ কারণে বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে আমার বসত বাড়িতে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও ওসমান গনির বর্জ্য ফেলার গর্তের পাশে পেয়ার মোহাম্মদের ধানি জমি রয়েছে। বিষাক্ত বর্জ্য আশপাশের বিপুল পরিমান ধানি জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে আমার প্রায় এক একর ধানি জমির ফসল বিষাক্ত বর্জ্যে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা জানান- অভিযানে গিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা পেয়েছিলেন। বিষয়টি তিনি কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানিয়েছিলেন। এরপরও যদি পাহাড় কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ করা হলে আবারও অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন- অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি সরেজমিন গিয়ে পাহাড় কাটা এবং বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষনের সত্যতা পেয়েছেন। এ ব্যাপারে তিনি লিখিত প্রতিবেদন উচ্চ পর্যায়ে পাঠাবেন এবং নির্দেশনা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কাউয়ারখোপ ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম জানিয়েছেন- ইউএনও ঘটনাস্থলে গিয়ে নিষেধ করার পরও ওসমান গনি আবারও পাহাড় কাটা শুরু করেছে। এমনকি তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে দেখা করতে বললেও সে তাতে কর্ণপাত করেনি।
ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহেদ জানিয়েছেন- যেখানে পাহাড় কাটা হচ্ছে সেটি খাস জমি। এ বিষয়ে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত প্রতিবেদনও দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ পাহাড় খেকো ওসমান গনি পাহাড় কাটা এবং পরিবেশ দূষনের মতো অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করে আসছে। এমনকি প্রশাসনের অভিযানের পর নিজেকে রক্ষার জন্য মোটা অংকের মিশন নিয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। এজন্য স্থানীয় দালাল চক্রের সহায়তায় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দৌঁড়ঝাপ চালিয়ে যাচ্ছে। পাহাড় খেকো ওসমান গনি এতবড় অপরাধ সংগঠিত করার পরও শাস্তির আওতায় না আসলে ভবিষ্যতে এ এলাকায় পাহাড় কাটা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাবে।

পাঠকের মতামত

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বাদী এখন কক্সবাজার দুদকের উপ-পরিচালক

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ...

দৈনিক জনকণ্ঠের রিপোর্ট রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় প্রাইভেট হাসপাতালগুলোর সরকারি লাইসেন্স নেই, তদন্ত টিমের পরিদর্শন

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা উখিয়ায় ১৫টি ক্লিনিক হাসপাতাল ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার চলছে অনুমতি বিহীন। সরকারিভাবে কোন ...

উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ, ইউনিফর্ম, অস্ত্র-গুলি ও হাতকড়াসহ আটক ১

কক্সবাজারের উখিয়ায় র‌্যাব পরিচয়ে রোহিঙ্গা যুবককে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা এবং প্রতারণার অভিযোগে একটি সংঘবদ্ধ ...